আজ- ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শনিবার  রাত ৪:৫৫

কালিহাতী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভুয়া ভাউচারে ১০ লাখ টাকা উত্তোলন!

 

বুলবুল মল্লিক:

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নানা অজুহাতে ৪৯টি ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে ১০ লাখ ২৩ হাজার ৫০৫টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের ২৯ আগস্ট থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত জঙ্গল, পানির ট্যাংক, বাথরুম, ভেষজ বাগান, দেওয়াল ও ৮টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, শ্রমিক মজুরি এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যন্ত্রপাতি মেরামত ও আনুসঙ্গিক বিলের ভুয়া ভাউচার উপস্থাপন করা হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডা. উম্মে রুমান সিদ্দিকী ওই টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন বলে স্বাস্থ্য বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।

কালিহাতী উপজেলা সদরের জনৈক মো. হাছান আলীর অভিযোগে প্রকাশ, কালিহাতী উপজেলার ৮টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বাবদ জানুয়ারি মাসে ৩২ হাজার টাকা ভুয়া ভাউচারে(নং-২, তাং-৯/০১/২০২১) উত্তোলন করা হয়েছে।

এরপর আবার একই বছরের ৩১ মে দুটি ভাউচারে(নং-১৪ ও ১৫, তাং-৩১/০৫/২০২১) মোট ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। অথচ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো আদৌ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়নি।

একইভাবে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. উম্মে রুমান সিদ্দিকী শ্রমিকদের মাধ্যমে হাসপাতালের ভেষজ বাগানের নামফলক লাগানো বাবদ ১১ হাজার টাকা, ভেষজ বাগানের মেরামত বাবদ ৭ হাজার ১০০,

ভেষজ বাগানের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা শ্রমিক মজুরি বাবদ ১১ হাজার ৫০০, হাসপাতালে অভ্যন্তরের গর্ত ভরাট ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার শ্রমিক মজুরি এক লাখ ৪৭ হাজার ৪০০ টাকা, হাসপাতালে বাউন্ডারি দেওয়াল পরিষ্কার ৪৮ হাজার, ফুলের বাগানের মাটি ভরাটের শ্রমিক মজুরি বাবদ ৮ হাজার, হাসপাতালের আবাসিক ভবনের বাথরুম পরিষ্কার বাবদ ৪০ হাজার টাকা,

হাসপাতালের অভ্যন্তরের পুকুর পাড় মেরামত ৫৭ হাজার টাকা, একই তারিখে মহিলা ও শিশু ওয়ার্ড এবং ওটি পরিস্কার ও শ্রমিক মজুরি বাবদ ২৮ হাজার টাকা, হাসপাতালের হলরুম, স্টোররুম, ও ওয়ার্ড পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বাবদ ১৫ হাজার এবং ইমার্জেন্সী ডাক্তারদের রুম এবং পানির ট্যাংকের দেওয়াল পরিস্কার বাবদ ২৫ হাজার টাকা ভুয়া ভাউচারে উত্তোলন করা হয়েছে।

চলতি বছরের মার্চে আল্ট্রা মেশিন মেরামত দেখিয়ে ২১ হাজার ৪০০, অ্যানেসথেসিয়া মেশিন মেরামতে ২৪ হাজার, প্যাথলজি মেশিন মেরামত দেখিয়ে ২৫ হাজার, অক্সিজেন মেশিন মেরামতে ২৫ হাজার, মাইক্রোস্কোপ মেশিন মেরামতে ১৯ হাজার ৭০০,

ইসিজি মেশিন মেরামত দেখিয়ে ২০হাজার ও শীতাতপযন্ত্র(এসি) মেরামতে ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। একই কায়দায় অন্যান্য বিল, আনুসঙ্গিক বিল, নানা ধরণের ক্রয় বিল বাবদ এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা ভুয়া ভাউচার উপস্থাপন করে উত্তোলন করা হয়েছে।

হাসপাতালে কর্মরত কয়েক ব্যক্তি পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে জানান, হাসপাতালের অফিস সহকারী মুনছুর আলী ও স্বাস্থ্য সহকারী মাছুম আল মাহমুদ স্থানীয় হওয়ায় তাদের সহযোগিতা নিয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. উম্মে রুমান সিদ্দিকী ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে ১০ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাত করেছেন।

কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গার্ডেনার আব্দুল আজিজ জানান, এ বছর শ্রমিক দিয়ে ভেষজ ও ফুলের বাগান পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও মেরামতের কোন কাজ করা হয় নাই।

হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স শিরিনা আক্তার জানান, তিনি প্রায় দুই বছর ধরে আবাসিক ভবনে বসবাস করছেন। এ পর্যন্ত কোদিনই আবাসিক ভবনের বাথরুম পরিষ্কার করা হয়নি।

রেখা মনি নামে অপর এক স্টাফ নার্স জানান, তারা নিজেদের টাকায় বাথরুম ও আবাসিক ভবনের আঙিনা পরিষ্কার করে থাকেন।

হাসপাতালের এসএসকে কর্মী হাবিবুর রহমান হাবিব ও কোহিনুর জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজগুলোর বেশিরভাগই হাসপাতালের কাজের লোকজন দিয়ে করা হয়।

সিকিউরিটি গার্ড মজনু মিয়া জানান, হাসপাতালে জঙ্গল ও ড্রেন তারাই পরিস্কার করেন। এ জন্য আলাদা কোন খরচ দেওয়া হয়না।

উপজেলার এলেঙ্গা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্য উপ-সহকারী সেলিম সিদ্দিকী ও বাংড়া উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. প্রণয় চন্দ্র দাস জানান, কালিহাতী উপজেলার ৮টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্যাংক ও বাথরুম পরিষ্কার, মাটি কাটা ও আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সহ কোন ধরনের কাজ করা হয়নি।

কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. উম্মে রুমান সিদ্দিকী জানান, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাজগুলো করা হয়নি। ওই বরাদ্দের টাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজ করা হয়েছে।

উপজেলা কমপ্লেক্সের কী কী কাজ করা হয়েছে তা তিনি জানাতে পারেন নি। ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে ১০ লাখ ২৩ হাজার ৫০৫ টাকা আত্মসাত করার বিষয়টি তিনি বেমালুম অস্বীকার করেন।

প্রকাশ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফার্মেসী থেকে রোগীদের মাঝে ওষুধ বিতরণ না করায় বিপুল পরিমাণ ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধগুলো ফেলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে স্টোররুমের সামনে পরিত্যক্ত স্থানে জমা করে রাখা হয়।

এ বছরের ১১ জুলাই মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধগুলো ফেলে দেওয়ার সময় স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে পারলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. উম্মে রুমান সিদ্দিকী ওষুধগুলো উদ্ধার দেখিয়ে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দিলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno