আজ- ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শনিবার  সকাল ৬:০৯

ক্লাস ও কোচিং সেন্টারে যৌন হয়রানির সিন্ডিকেট!

 

দৃষ্টি নিউজ:


টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের সমন্বয়ে যৌন হয়রানি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠার অভিযোগ উঠেছে। ক্লাস ও কোচিং সেন্টারে তারা ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করেন। তাদের সহায়তা করছেন কয়েক নারী শিক্ষকও। দিনের পর দিন তারা এ অপকর্ম করলেও প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি ভুক্তভোগীরা। এ কারণে সোমবার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ ঘটনার ওপর টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসকের (ডিসি) প্রাথমিক প্রতিবেদন ও স্থানীয়দের তথ্যে এসব কথা জানা গেছে। মঙ্গলবার(১ অক্টোবর) ডিসি প্রতিবেদনটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন।
মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে ডিসির প্রতিবেদন পাঠানো হয়। পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয় থেকে তা সেদিনই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালকের পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষকদের অনতিবিলম্বে অন্যত্র বদলির সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি দোষী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মাউশির মহাপরিচালকের রুটিন দায়িত্ব পালনকারী পরিচালক অধ্যাপক শামসুল হুদা বলেন, বিন্দুবাসিনী হাইস্কুলের ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের পাঠানো প্রতিবেদন পেয়েছি। তিনি বলেন, সেখানকার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। লজ্জায় আমাদের মাথা হেট হয়ে আসে। তিনি বলেন, কেউ যখন কোনো অপরাধ করেন তখন তার সামাজিক পরিচয় মুখ্য থাকে না। তার প্রধান পরিচয় সে অপরাধী। আমরা কোনো অপরাধীর পক্ষ নেব না। তিনি আরো বলেন, জেলা প্রশাসক সার্বিক বিষয় তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছিলেন। কমিটির প্রতিবেদন এবং ঘটনার প্রাথমিক প্রতিবেদনের আলোকে অপরাধীদের প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেব।
বিন্দুবাসিনী হাইস্কুলের দুই হাজারের বেশি ছাত্রীর জন্য রয়েছেন মাত্র ৫২ জন শিক্ষক। তাদের মধ্যে ২৫ জন নারী। প্রতিষ্ঠানটিতে এক বছর ধরে কোনো প্রধান শিক্ষক নেই। আব্দুল্লাহ আল মামুন তালুকদার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। ডিসি খান মো. নুরুল আমিনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্রীদের প্রাইভেট ও কোচিংয়ে বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষকসহ কতিপয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
যারা পড়ত না তাদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো। পরীক্ষায় কম নম্বরও দেয়া হতো। আবার তাদের যৌন হয়রানি করা হতো। লোক-লজ্জার ভয়ে তারা কাউকে বলত না। কিন্তু যৌন হয়রানির প্রতিবাদে সোমবার সকাল ৯টার দিকে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক এসএম সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে স্কুলে বিক্ষোভ করে কয়েকশ’ ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা।
প্রতিবেদনে যৌন হয়রানির শিকার বেশ কয়েকজন ছাত্রীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বিক্ষোভকালে অভিভাবক-ছাত্রীরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ লম্পট শিক্ষকদের তাৎক্ষণিক বদলি ও শাস্তি দাবি করেন। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্ত শিক্ষককে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়ে জেলহাজতে পাঠান। জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
স্থানীয়রা জানায়, প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন শিক্ষক সংঘবদ্ধভাবে কোচিং ও প্রাইভেট টিউশন বাণিজ্য করেন। কোচিং সেন্টার ও প্রাইভেটে ছাত্রীদের পড়তে বাধ্য করা ও যৌন হয়রানির অভিযোগ বেশি। যারা কোচিং-প্রাইভেটে পড়ে তাদের কাউকে কাউকে এবং যারা না পড়ে তাদের ক্লাসরুমে অশালীন কথাবার্তা, মন্তব্য, অশোভন অঙ্গভঙ্গি, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছিলেন সাইদুর রহমানসহ কয়েক শিক্ষক।
মঙ্গলবার টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। কয়েকজন শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে তারা বলেন, সহকারী শিক্ষক সাইদুর রহমানকে সহায়তা করেছেন শিক্ষক এ্যানি সুরাইয়া, হাবিবুর রহমান, মাকসুদা রানা ও প্রধান শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুন তালুকদার। এসব শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
অপরদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ডিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইদুর রহমানসহ কয়েকজন শিক্ষক ছাত্রীদের কোচিং সেন্টার এবং প্রাইভেটে পড়তে চাপ সৃষ্টি ও হয়রানি করতেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকও এ অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা খানম স্থানীয় হওয়ায় বিশেষ করে তার দুর্বল মনিটরিংয়ের কারণে ঐতিহ্যবাহী বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়টির এ দৈন্য দশা।
প্রতিষ্ঠানটিতে চরম অব্যবস্থাপনা, শৃঙ্খলাহীনতার কারণে একশ্রেণির চরিত্রহীন ও দুর্নীতিবাজ শিক্ষক মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছেন। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে চলেছে বলে মনে করেন জেলা প্রশাসক।
প্রতিবেদনের সঙ্গে ছাত্রীদের (হাতে লেখা) কয়েকটি অভিযোগপত্র সংযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে এক ছাত্রী লিখেছে, ‘প্রাইভেটে গেলে স্যার আমাকে বলে, তুই আমার সব থেকে প্রিয় ছাত্রী। তোকে দেখলে আমার মনে হয় আমি ক্লাস নাইনে আবার ভর্তি হই। তোর জন্য আমি যৌবন ফিরে পাওয়ার ওষুধ খাওয়া শুরু করছি।’ ফেসবুকে বাজে মেসেজ পাঠানোর কথা উল্লেখ করে এ ছাত্রী আরও লিখেছে, উল্লিখিত ইংরেজির শিক্ষক পর্ণো সিনেমার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতেন।
আরেক ছাত্রী লিখেছে, উল্লিখিত শিক্ষক তার মাকে নিয়ে অশ্রাব্য কথাবার্তা বলতেন। তার মধ্যে একটি হল- ‘তোর বাবা তোর মাকে সুখ দিতে পারে না।’ অপর এক ছাত্রী লিখেছে, তার সঙ্গে উল্লিখিত শিক্ষক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিল।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno