আজ- ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শনিবার  ভোর ৫:২৮

গুজব ছড়িয়ে হয়রানির অভিযোগে সাংবাদিকের নামে মামলা ॥ সংবাদ বর্জনের কর্মসূচি

 
প্রবাসী হাফিজুর রহমান দুলালের বসতবাড়ি

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার যদুরপাড়া গ্রামে বিদেশ ফেরত হাফিজুর রহমান দুলাল নামে এক প্রবাসী হোম কোয়ারেন্টাইন মানছে না বলে গুজব ছড়িয়ে ওই পরিবারকে হয়রানির অভিযোগে তোফাজ্জল হোসেন তুহীন নামে স্থানীয় এক সাংবাদিকের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার(১ এপ্রিল) রাতে কালিহাতী থানায় প্রবাসী হাফিজুর রহমান দুলালের স্ত্রী মামলাটি দায়ের করেন।

বৃহস্পতিবার(২ এপ্রিল) দুপুরে ওই মামলাটি মিথ্যা দাবি করে কালিহাতী প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে প্রশাসনের সংবাদ বর্জনের কর্মসূচি দেয়।

জানা যায়, ইংরেজি দৈনিক নেক্সট নিউজ এর সম্পাদক ও কালিহাতীর তালেমন হযরত আলী মৎস প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ তোফাজ্জল হোসেন তুহীন গত ৩০ মার্চ (সোমবার) উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম আরা নিপার কাছে মুঠোফোনে অভিযোগ করেন, উপজেলার যদুরপাড়া গ্রামে বিদেশ ফেরত এক প্রবাসী হোম কোয়ারেন্টাইনে না থেকে এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাকে তিনি নিজে একাধিকবার সচেতন করার চেষ্টা করলেও তা না মেনে বাইরে ঘুরতে থাকেন। কাজের চাপে ঘটনাস্থলে যেতে বিলম্ব হওয়ায় তিনি দুই ঘণ্টার মধ্যে ইউএনওকে তিন বার কল দিয়ে তাড়া দেন।

অবশেষে ইউএনও করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে এক কর্মসূচি বাদ রেখে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার রহমান, থানার অফিসার ইনচার্জ হাসান আল মামুন সহ প্রোটোকল নিয়ে অভিযুক্তের তথ্যের ভিত্তিতে বিদেশ ফেরত ওই ব্যক্তির বাড়িতে যান। কিন্তু সেখানে বিদেশ ফেরত কাউকে পাওয়া যায়নি। এমনকি ওই ওই পরিবারের কেউ বিদেশ থেকে দেশে আসেনি বলে ইউএনও নিশ্চিত হন। পরে ইউএনও একাধিকবার সাংবাদিক তুহীনকে ফোন দিলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

কিছু সময় পর ফোন চালু হলে সাংবাদিক তুহীনকে অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি ইউএনওকে ধমকের সুরে তার কাজের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন, আপনারা ভালোভাবে তদন্ত না করেই আমার অভিযোগ মিথ্যাা প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। এক পর্যায়ে মুঠোফোনে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। শেষে ইউএনও তাকে অভিযুক্ত বিদেশ ফেরত ব্যক্তিকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

সরেজমিনে মাদারিয়াপাড়া গ্রামের নাজিম উদ্দিন(৪৭), তালতলা গ্রামের হারুনুর রশিদ(৪০), আব্দুল আজিজ(৫৬), শহীদুল ইসলাম(৪০), মো. সোনা মিয়া(৩৫) সহ অনেকেই জানান, সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেন তুহীন ইউএনও’র কাছে অভিযোগের আগে যদুরপাড়া গ্রামের ওমান প্রবাসী হাফিজুর রহমান দুলালের বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রী রেহেনা পারভীনের সাথে কথা বলেন। এ সময় রেহেনা পারভীন ও তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়ের সাথে তোফাজ্জল হোসেন তুহীনের কথা কাটাকাটি হয়। পরে ভ্রাম্যমান আদালত এসে বিদেশ ফেরত কাউকে বাড়িতে না পেয়ে ক্ষুব্দ হন এবং তথ্যদাতা সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেন তুহীনকে ফোন করেন।

স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি জানান, হাফিজুর রহমান দুলাল বিদেশ থেকে বাড়িতে এসেছে এমন খবর পেয়ে তুহীন উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেন। এ নৈতিক দায়িত্ব পালন করে তিনি কোন অপরাধ করেননি।

অপরদিকে, সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেন তুহীনের নামে জনৈক মহিলা মামলা দায়ের করায় কালিহাতী প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা বৃহস্পতিবার(২ এপ্রিল) উপজেলার বাঘুটিয়া স্কুল মাঠে এক জরুরি সভা করে। প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহআলমের সভাপতিত্বে ওই সভায় সাংবাদিক তুহীনের নামে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। একই সাথে মামলা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসনের সকল সংবাদ বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এ ঘটনায় ওমান প্রবাসী হাফিজুর রহমান দুলালের ছেলে রুহুল আমিন রাসেল বলেন, মাদারীপাড়া গ্রামের মৃত হযরত আরী মুন্সীর ছেলে তোফাজ্জল হোসেন তুহীন বাড়িতে এসে আমার আব্বা এসেছে বলে দাবি করে এবং আমাদের কাছে এক লাখ টাকা চায়। না দিলে পুলিশ দিয়ে জেল-হাজত খাটানোর কথা বলে ভয় দেখায়। পরে আমাদের বাড়িতে ভ্রাম্যমান আদালত আসে। এখন আমরা ঘর থেকে বের হতে পারছি না। বাজারে মানুষ আমাদেরকে করোনা আক্রান্ত বলে তাড়িয়ে দিচ্ছে। সবাই আমাদের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকছে, অতি প্রয়োজনেও আমরা বাড়ির বাইরে যেতে পারছিনা।

নারান্দিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শুকুর মামুদ জানান, স্থানীয় মানুষের ছোটখাট নানা বিষয় নিয়ে তোফাজ্জল হোসেন তুহীন থানায় মামলা করার পরামর্শ দেয়া, কোন কারণে আটক হলে পুলিশের সাথে দেন-দরবার করে ছাড়িয়ে আনা ইত্যাদি কাজকর্ম করে সমালোচিত হচ্ছেন। ওইসব কারণে এলাকার মানুষ তার উপর ক্ষুব্দ। তার বিষয়ে অনেকেই নানা ধরণের অভিযোগ নিয়ে তার কাছে এলে ছোটখাট বিষয় হলে তিনি স্থানীয়ভাবে মিমাংসার চেষ্টা করেন।

উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার রহমান বলেন, সে সাংবাদিক ও শিক্ষক। তার কাছ থেকে আমরা এমন মিথ্যা অভিযোগ আশা করিনি। যেখানে আমরা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সারাদিন কাজ করে যাচ্ছি সেখানে এরকম মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে আমাদেরকে হয়রানি করা মোটেও ঠিক হয়নি। এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা আরা নীপা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের একটি জরুরি প্রোগ্রামে ছিলাম। আমাকে মুঠোফোনে অভিযোগ করলে ব্যস্ততার কারণে আমার যেতে দেরি হয়। আমি তাকে প্রোগ্রাম শেষ করে যাওয়ার কথা বললে সে সাংবাদিক পরিচয়ে আমাকে যেতে বাধ্য করে। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ হলে সে আমার সাথে মুঠোফোনে অশোভন আচরণ ও কথা কাটাকাটি করে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno