টাঙ্গাইলের কাউন্সিলর মোর্শেদের বিরুদ্ধে স্ত্রী হত্যার মামলা

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা আতিকুর রহমান মোর্শেদের বিরুদ্ধে স্ত্রী হত্যা ও লাশ গুমের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শামসুল আলম টাঙ্গাইল সদর থানার ওসিকে তদন্ত শেষে প্রদিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে, চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আতিকুর রহমান মোর্শেদকে অস্ত্র মামলায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে। টাঙ্গাইলের আদালত পরিদর্শক তানবীর আহমেদ বিষয় দুটি নিশ্চিত করেছেন।

কাউন্সিলর মোর্শেদের দ্বিতীয় স্ত্রীর বাবা সৈয়দ শরিফ উদ্দিন বাদি হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও আর অজ্ঞাত ৩-৪ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

মামলার আসামিরা হচ্ছেন- টাঙ্গাইল শহরের বিশ্বাস বেতকা এলাকার মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে ও ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আতিকুর রহমান মোর্শেদ(৫২), ওই এলাকার মৃত আ. মোমেনের ছেলে মুন্সী তারেক পটন(৪৯), মৃত লুৎফর রহমানের ছেলে পারভেজ খান রনি(৩৬), সোহেল ওরফে বাবু (২৭), দুলাল সূত্রধরের ছেলে অন্তর সূত্রধর (২৭), আতিকুর রহমান মোর্শেদের প্রথম স্ত্রী সুমা(৪৫), মুন্সী তারেক পটনের স্ত্রী লিনা(৪০), শামীম আল মামুনের ছেলে রাফসান(২৮), মৃত আজিজ মিয়ার ছেলে আয়নাল মিয়া (৪৫) প্রমুখ।

মামলা সূত্রে জানা যায়, কাউন্সিলর মোর্শেদের বাসার সামনে সৈয়দ শরিফ উদ্দিন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাসা ভাড়া থাকতেন। ২০১২ সালের জুন মাসে তার মেয়ে পিংকিকে মোর্শেদের লোকজন সেখান থেকে অপহরণ করে। পরে ১৭ নং ওয়ার্ডের কাজী মোস্তফার মাধ্যমে মোর্শেদ ও সৈয়দ আমেনা পিংকির বিয়ে হয়।

বিয়ের কিছুদিন পর জোর করে কাজী মোস্তফার বালাম বই থেকে মোর্শেদ তাদের কাবিন নামা ছিঁড়ে ফেলে দেয়। তাদের সংসারে ছয় বছরের এক মেয়েও রয়েছে। দুই স্ত্রী থাকায় মোর্শেদের পরিবারের মাঝে মাঝেই ঝগড়ার সৃষ্টি হতো।

২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারি রাতে মুন্সী তারেক পটনের বাসায় দাওয়াতের কথা বলে মোর্শেদ তার দ্বিতীয় স্ত্রী পিংকিকে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়েই অভিযুক্ত আসামিরা পিংকিকে হত্যার পর লাশ গুম করে ফেলে।

দ্বিতীয় স্ত্রী পিংকির বাবা সৈয়দ শরিফ উদ্দিন জানান, তার মেয়ে পিংকিকে মোর্শেদ অপহরণের পর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করে। এরপর মোর্শেদসহ তার বাহিনীর লোকজন তার মেয়েকে হত্যা করেছে।

ক্যাডার মোর্শেদের ভয়ে এতদিন মামলা করারও সাহস পাননি। মোর্শেদ গ্রেপ্তার হওয়ায় তিনি মামলা দায়ের করতে সাহসী হয়েছেন। মোর্শেদসহ তার ক্যাডার বাহিনীর ফাঁসির দাবি জানান তিনি।

টাঙ্গাইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মীর মোশারফ হোসেন জানান, তিন দিনের রিমান্ডে মোর্শেদ জিজ্ঞাসাবাদে তার ওই অস্ত্র এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছে। তার দেওয়া তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।

টাঙ্গাইল সদর থানা সূত্র জানায়, এছাড়াও মোর্শেদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে দুই যুবলীগ নেতা হত্যা, ছাত্রদল নেতা রেজা হত্যা, ব্যবসায়ী তুহিন হত্যা মামলাসহ চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের এক ডজন মামলা হয়েছে। তবে এর মধ্যে মোর্শেদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ছাত্রদল নেতা রেজা হত্যা মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

প্রকাশ, টাঙ্গাইল পৌরসভার ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আতিকুর রহমান মোর্শেদকে গত বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) গোয়েন্দা পুলিশ ও সদর থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে পৌরসভার সামনে থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে তার বিশ্বাস বেতকা এলাকার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে দুইটি বিদেশি পিস্তল, ছয় রাউন্ড গুলি ও দুটি ম্যাগজিন উদ্ধার করে পুলিশ।

শুক্রবার (২০) আগস্ট জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মোর্শেদকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। সোমবার (২৩ আগস্ট) তিন দিনের রিমান্ড শেষে মোর্শেদকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

২০১১-১২ থেকে দুই বছর জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আতিকুর রহমান মোর্শেদ। এরআগে টাঙ্গাইল শহর ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। বর্তমানে তার দলীয় পদ না থাকলেও শহর আওয়ামীলীগের দলীয় বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশ নিতেন তিনি।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে