আজ- ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শনিবার  সকাল ৮:৪২

টাঙ্গাইলে শীতের তীব্রতায় জনজীবন জবুথবু

 

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইলে কয়েকদিন ধরে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়া শীতের তীব্রতায় জনজীবন জবুথবু হয়ে পড়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া নিন্ম আয়ের মানুষ বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা ঘন কুয়াশার কারণে সরিষা ও বোরো আবাদের বীজতলার ক্ষতির আশংকা করছেন।


জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন যাবত টাঙ্গাইলে উত্তরের বাতাস বইছে। আরও ৪-৫ দিন এই বাতাস থাকতে পারে। বুধবার (৪ জানুয়ারি) টাঙ্গাইলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।


সরেজমিনে টাঙ্গাইল পৌরসভার আকুর টাকুর পাড়া, কাগমারা, এনায়েতপুর, বাঘিল ইউনিয়নের দুরিয়াবাড়ী, ধরেরবাড়ী, টাবলাপাড়া, যুগনী, দাইন্যা ইউনিয়নের বাউসা, বাইমাইল ও পোড়াবাড়ী ইউনিয়নের খাড়জানাসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে জানা যায়, প্রত্যেক এলাকায়ই উত্তুরে তীব্র হিমেল হাওয়া বইছে। শীতের তীব্রতায় অনেকেই ঘর থেকে বাইরে যাচ্ছেন না। আবার কেউ কেউ গরম পোশাক পড়ে বাড়ি থেকে বের হলেও হিমেল হাওয়ার প্রভাবে বেশি সময় থাকতে পারছেনা। ছিন্নমূল মানুষগুলো স্কুল-কলেজ ও মসজিদের বারান্দায় কুত্তাভীর দিয়ে রাত যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকে খড় ও কাঠে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।


টাঙ্গাইল জেলা সদরের বস্তি এলাকার রাশেদা বেগম, আবুল হোসেন, কাশেম মিয়া, আমির আলী জানান, শীতের কারণে সকালে রিকশা নিয়ে বের হওয়া যায়নি। জমানো টাকা দিয়ে বাজার করে খেতে হচ্ছে। অন্য বছর এই মৌসুমে শীত বস্ত্র পেলেও এ বছর কেউ কোনো সহযোগিতা করেনি। অনেকেই ঠান্ডা থেকে বাঁচতে দিনের আলোয় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

তারা জানান, শীতের কারণে বস্তির অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা দরকার।


এনায়েতপুর গ্রামের আনিসুর রহমান নামে এক কৃষক জানান, তিনি বোরো মৌসুমের জন্য ধানের বীজতলা তৈরি করেছেন। কিন্তু ঘন কুয়াশার সাথে তীব্র শীতের কারণে ধানের চারাগুলো বাড়তে পারছেনা। এই এলাকার কৃষি অফিসার পরিবর্তন হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর ধরে কৃষি অফিসারের কোনো পরামর্শ তারা পান না। ফলে স্থানীয় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।


দুরিয়াবাড়ী গ্রামের কৃষক মো. শাহিন মিয়া জানান, তিনি এবছর দেড় বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। গাছে ফুল ধরেছে। তবে ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ার কারণে গাছের ফুল ও ডগায় মান্দা(এক প্রকার ফাঙ্গাস) পড়ছে।


টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আহসানুল বাসার জানান, বর্তমানে টাঙ্গাইলে যে তাপমাত্রা আছে- এতে ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না। বরং সরিষা ও গমের উপকার হবে। কয়েক দিন রোদ উঠলে সবজির জন্যও উপকার হবে। তবে টানা ১০ দিন এই অবস্থা থাকলে বোরো বীজতলা ‘কোল্ড ইনজুরিতে’ পড়তে পারে।


টাঙ্গাইল আবহাওয়া অধিদপ্তরের ইনচার্জ জামাল উদ্দিন জানান, টাঙ্গাইলে যে বাতাস বইছে এটাকে শৈত প্রবাহ বলা যায় না। তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে সেটাকে শৈত প্রবাহ বলা হয়। দিনের বেলায় সূর্যের আলো দেখা না দেওয়ায় তাপমাত্রা বাড়ছে না। তাপমাত্রা না বাড়ার কারণে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে- তবে এটা অবশ্যই শৈত্যপ্রবাহ নয়।


টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর জানান, ইতোমধ্যে পাঁচ শতাধিক শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া আরও দুই হাজার কম্বল ২-১ দিনের মধ্যে পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে বিতরণ করা হবে। জেলার জনপ্রতিনিধিদের শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।


টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, জেলার ১২টি উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৬০ হাজার কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে পাঁচ হাজার কম্বল ব্যবস্থা করা হয়েছে। দ্রুত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা ও জনসাধারণের মাঝে এসব কম্বল বিতরণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno