আজ- ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  সকাল ৬:৫৮

‘ভাগার’ থেকে সৌন্দর্যের রাণী ডিসি লেক’র উদ্বোধন

 

বুলবুল মল্লিক:

009টাঙ্গাইলের লৌহজং নদীর বিলুপ্ত অংশ নোংরা, দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা-আবর্জনার ‘ভাগার’কে মননশীল চিন্তা ও তার সঠিক বাস্তবায়নে মাত্র এক বছরেই মনোরম পরিবেশ আর দৃষ্টিনন্দন রূপ বিলিয়ে সৌন্দর্যের রাণীতে পরিণত হয়েছে ডিসি লেক। শুক্রবার(২৩ সেপ্টেম্বর) টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে সরকারের জলাধার সংরণ প্রকল্পের আওতায় গড়ে ওঠা সৌন্দর্যমন্ডিত ‘ডিসি লেক’ উদ্বোধন করা হয়েছে।

008 উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. মহিবুব হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন, মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সচিব(সমন্বয় ও সংস্কার) এনএম জিয়াউল আলম, ঢাকা বিভাগীয় কমিশানার হেলালুদ্দীন আহমদ। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সাংসদ খন্দকার আব্দুল বাতেন, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ মনোয়ারা বেগম, টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মো. আনোয়ার হোসেন, পুলিশ সুপার মাহবুব আলম, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও দৃষ্টি টিভি’র চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান, জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি খ. আশরাফুজ্জামান স্মৃতি, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের, টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র জামিলুর রহমান মিরণ, সিনিয়র জেলা তথ্য কর্মকর্তা কাজী গোলাম আহাদ, টাঙ্গাইল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হারুন অর রশিদ প্রমুখ।

007
সরেজমিনে দেখা গেছে, টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজের পাশে অবস্থিত জেলা সদরের ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত সাবেক লৌহজং নদীর বিলুপ্ত একাংশ এখন ডিসি লেক নামে পরিচিত। ১৯৬৯ সালে টাঙ্গাইল জেলা গঠনের সময় প্রয়োজনীয় সরকারি ভবন ও সড়ক তৈরি করে লৌহজং নদীর আঁকাবাঁকা অংশে বাঁধ দিয়ে ভরাট করা হয়। এ ভরাট করা জমিতে জেলা প্রশাসন ও আদালত ভবনসহ বেশ কিছু সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। বাঁধ দেয়া অংশ সম্পূর্ণ ভরাট না করায় শহরের ভেতরে তৈরি হয়ে যায় ৩টি বড় লেক। রক্ষণাবেক্ষণ না করা এ লেকগুলো ভরাট হয়ে যেতে থাকে। পাশাপাশি নোংরা, দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা-আবর্জনাপূর্ণ ‘ভাগার’ হয়ে শহরের পরিবেশ নষ্ট হতে থাকে। এ ছাড়া লেকের আশপাশে প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে দখল ও ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করতে থাকেন।

005দেশের সব এলাকায় জলাধার সংরক্ষণে সরকারের ঘোষণাকে গুরুত্ব দিয়ে বর্তমান জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন এ লেকগুলো সংরক্ষণ ও উন্নয়নের উদ্যোগ নেন। এ জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে তিনি জেলা প্রশাসনের সব কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। কিন্তু এত বড় লেক জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে করা সম্ভব নয়। তাই জেলা প্রশাসন কার্যালয় ও সার্কিট হাউজ সংলগ্ন লেকটি অনেকটা রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্প অনুকরণে উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দে জলাধার সংরক্ষণ, সৌন্দর্য বর্ধন নীতিমালার আওতায় লেকটি সংস্কার ও লেকের চারপাশের সৌন্দর্য বর্ধনকল্পে গত বছরের শুরুর দিকে ভূমি মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করা হয়। তৎকালীন ভূূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব (বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব) মোহাম্মদ শফিউল আলমের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় এ লেকটি উন্নয়ন ও সংস্কারে দুই কোটি ৯১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রকল্পের কার্যাদেশ শুরু হয় ২০১৫ সালের ৬ মে ও বাস্তবায়ন মেয়াদকাল জুন ২০১৬। এ পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ৩৩ দশমিক ৪৫ একর লেকটি পুনঃখনন, লেকে দৃষ্টিনন্দন ঘাট নির্মাণ ও লেকের মাঝে দ্বি-তল ভাসমান মঞ্চ তৈরি করা হয়।অন্যদিকে, লেক উন্নয়ন কাজ শেষ হতে না হতেই এ লেকের চারপাশে শহরের বিনোদনপ্রেমীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। কিন্তু লেকের প্রয়োজনীয় উন্নয়নে অর্থ না থাকায় পরবর্তী সময়ে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে স্থানীয়ভাবে তহবিল গঠন করে লেকের চারপাশে বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে পাড় বাঁধাই ও সবুজায়ন, লেকের পানিতে চলানোর জন্য ফাইবার বোট ক্রয়, সাধারণ জনগণের ব্যবহারের জন্য মাল্টিপারপাস কনফারেন্স কক্ষ তৈরি, পাড়ের চারপাশে সৌন্দর্য বর্ধনকারী ফুলগাছ রোপণ, বিভিন্ন সৌন্দর্য বর্ধনকারী ভাস্কর্য তৈরি, আগত দর্শনার্থীদের বসার স্থান, স্ন্যাক্স এবং ফুড কর্নার তৈরি এবং কোমলমতি শিশু-কিশোরদের চিত্ত বিনোদনের জন্য লেক সংলগ্ন শিশু পার্ক তৈরি করা হয়। এখন লেকের মাঝে একটি ফোয়ারা ও এক পাশে সুইমিং পুল এবং ৩৫ ফুট উঁচু একটি বাটারফ্লাই পার্ক নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও তথ্য যোগাযোগ) মোখলেছুর রহমান বলেন, টাঙ্গাইল জেলা সদরে ৪টি সরকারি কলেজ, ১টি বিশ্ববিদ্যালয় ৩টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১৬টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া অনেকগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বিনোদনের জন্য শহরে তেমন কোনো স্থান নেই। এ লেকটিকে উন্নয়ন করায় শিশু-কিশোরসহ সর্বস্তরের মানুষের জন্য একটি বিনোদন কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। এখানে কোমলমতি শিশুদের জন্য তৈরি হয়েছে শিশুপার্ক। এখন প্রতিদিন বিকালে এখানে বিনোদনপ্রেমীদের ভিড় দেখা যায়। আর ছুটির দিনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিনোদনপ্রেমীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে ডিসি লেক। তাই এ লেকটিকে আরো দৃষ্টিনন্দন করে সাজানোর জন্য জেলা প্রশাসক সরাসরি কাজ করে যাচ্ছেন, বেশ কিছু নতুন উদ্যোগও নিয়েছেন তিনি।006 টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন বলেন, লেকটি তৈরি হওয়ায় শহরের জলাধার রা হওয়ার পাশাপাশি জনগণের অবসর সময়ে চিত্ত বিনোদনের সুযোগ হয়েছে। তাছাড়া ‘ডিসি লেক’এ শিশুপার্ক স্থাপনের ফলে টাঙ্গাইলের কোমলমতি শিশু-কিশোরদের চিত্ত বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কর্মসংস্থান হয়েছে বেকার যুবকের। আর পরিত্যক্ত ব্যবহার অনুপযোগী সরকারি জায়গা সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের নির্মল আনন্দ লাভ ও ফ্রি-ওয়াই ফাই ইন্টারনেটের সুবিধা গ্রহণ করতে পারছে।
লেকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জেলা প্রশাসক জানান, ডিসি লেকটির সব ধরনের মালিকানা থাকছে জেলা প্রশাসনের। তাই এটি পরিচালনার জন্য নামমাত্র দর্শনার্থী ফি নেয়া হচ্ছে। এখানে নানা প্রকারের ফলদ, বনজ, ঔষধি, সৌন্দর্যবর্ধনকারী বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে যা ভবিষ্যতে বিরল প্রজাতির বৃক্ষ সংরক্ষণাগার হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে। লেক সংলগ্ন মিনি চিড়িয়াখানা স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পাখিদের নিরাপদ আবাস নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৬০০ মাটির হাঁড়ি গাছে টাঙানো হয়েছে। লেকের পাড়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বসার জন্য নির্ধারিত কর্নার রাখা হয়েছে। ইচ্ছে হলে তাদের কাছ থেকে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার কথা শুনতে ও জানতে পারবেন। লেকের পাড়ে বয়স্ক নাগরিকের জন্য সিনিয়র সিটিজেন কর্নার তৈরির কাজ চলছে। শিশু-কিশোরদের সাঁতার শেখানোর জন্য লেকের এক পাশে মিনি সুইমিংপুল স্থাপনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। লেকের চতুর্দিকে ওয়াকিং/জগিং ট্র্যাক নির্মাণ কাজ চলমান। লেকের মাঝখানের দ্বীপে বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে বাটারফ্লাই জোন তৈরি এবং লেকের পানিতে ও সার্কিট হাউসের সামনে দুটি পানির ফোয়ারা নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পরিবেশকে আরো উপভোগ্য করতে এ প্রকল্পে নতুন করে আরো মনোমুগ্ধকর বিনোদন ব্যবস্থাও যোগ করতে চাইছেন তিনি। বাংলাদেশে সব জেলায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে জলাধার সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য বর্ধন নীতিমালার বাস্তবায়নের পাশাপাশি বিনোদনের স্থায়ী ব্যবস্থা হতে পারে বলে জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno