আজ- ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  সন্ধ্যা ৭:৫৬

শিশু ধর্ষণ চেষ্টার শাস্তি জুতাপেটা! :: গ্রাম্য সালিশের রায়

 

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের আটিয়া ইউনিয়নের আটিয়া গ্রামে ৭বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার দায়ে সলিম বিল্লাহ(৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে ১০বার জুতাপেটা করার মাধ্যমে ঘটনাটি মিমাংসা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী গ্রাম্য মাতব্বর এ সিদ্ধান্ত নেন।

সরেজমিনে ধর্ষণ চেষ্টার শিকার শিশুর চাচী ও প্রত্যক্ষদর্শী(সঙ্গত কারণে নাম প্রকাশ করা গেল না) জানান, গত ১৩ সেপ্টেম্বর(শুক্রবার) সন্ধ্যায় তার সাংসারিক কাজে গম পরিমাপের জন্য পাশের বাড়ির মৃত মাহতাবিন বিল্লাহর ছেলে সলিম বিল্লাহর(৫৫) বাড়িতে দাড়িপাল্লা আনার জন্য যান। তখন তিনি (সলিম বিল্লাহ) তাকে বলেন, ‘আমার বউ বাসায় নাই, রাতে খাব কি?’ পরে তিনি ভাতিজি ও মেয়েকে ওই বাড়িতে রেখে তার রাতের খাবারের জন্য নিজের বাড়িতে যান। কিছুক্ষণ পর খাবার নিয়ে গিয়ে দেখতে পান তার(চাচীর) ভাতিজির(৭) পড়নের কাপড় খুলে সলিম বিল্লাহ ধর্ষণের চেষ্টা করছেন। এতে তিনি হতভম্ব হয়ে পড়েন ও প্রতিবাদ করে বলেন, ‘আপনি এটা কি করতেছেন? এটা কি আপনাকে মানায়?’ তখন সলিম বিল্লাহ তার পা জড়িয়ে ধরে মাফ(ক্ষমা) চান এবং বলেন, ‘মা আমার ভুল হয়ে গেছে। আর কোনদিন এই ভুল হবে না। আমাকে তুমি বাঁচাও।’ তখন তিনি চিৎকার-চেঁচামেচি করলে এলাকার কয়েকজন লোক এসে তাকে আমার পা ধরা অবস্থায় দেখে ফেলে। এক পর্যায়ে এলাকার লোকজন জড়ো হয়ে সলিম বিল্লাহকে মারধর করে।

এ সময় তিনি জানান, সলিম বিল্লাহ তার ভাতিজি ও মেয়েকে প্রথমে ভয় দেখায় ও পরে টাকার লোভ দেখায়। তিনি আরো জানান, এর আগেও তার মেয়ে ও ভাতিজি তার কাছে তার(সলিম বিল্লাহ) এই ধরণের অপকর্মের কথা তাকে বলেছে, কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেন নি। কারণ তিনি বয়স্ক পিতৃতুল্য লোক, তারা সবাই তাকে খুব সম্মান করেন।

গ্রাম্য সালিশে জুতাপেটার ভিডিও

স্থানীয় মজনু মিয়া ও ঝর্ণা বেগম সহ আরো কয়েকজন জানান, এ ঘটনায় ওই দিন রাতে অভিযুক্তের বাড়িতে স্থানীয় মাতব্বর মীর কামালের সভাপতিত্বে গ্রাম্য সালিশের আয়োজন করা হয়। সালিশে আটিয়া ইউপি সদস্য জয়নাল উদ্দিন, শাজাহান আলী, স্থানীয় মাতব্বর মুকুল মাস্টারের বাহামভূক্ত লোকজন ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অভিযুক্ত সলিম বিল্লাহকে ১০বার জুতাপেটা করে ধর্ষণ চেষ্টার বিচার সম্পন্ন করেন।

স্থানীয় চায়ের দোকানে বসে থাকা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানান, ধর্ষণ চেষ্টার বিচার করার অধিকার শুধুমাত্র আদালতের। কোন মাতব্বর এ বিষয়ে সালিশ করলে সেটাও অপরাধ। এত বড় একটি ঘটনা মাতব্বররা কাউকে না জানিয়ে অভিযুক্তের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে গোপনে ঘরোয়া সালিশের মাধ্যমে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা করেছেন।

গ্রাম্য সালিশ চলছে

ঘটনার শালিস পরিচালনাকারী ও আটিয়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য জয়নাল উদ্দিন জানান, তারা ধর্ষণ চেষ্টার সালিশ করেন নি। সলিম বিল্লাহকে সলিমের ছেলে নাজমুল ও তার বন্ধু মহসিন আলীর ছেলে সাদ্দাম মারপিট করেছিল সে ঘটনার মিমাংসা করেছেন। গ্রাম্য সালিশে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তারা সলিম বিল্লাহকে ১০বার জুতাপেটা করার রায় ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করেন।

এ প্রসঙ্গে আটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. সিরাজ হোসেন মল্লিক জানান, তিনি ঘটনাটি জানতেন না। ঘটনাটি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। বিষয়টি খতিয়ে দেখে যত দ্রæত সম্ভব তিনি প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার পদক্ষেপ নিবেন।

এ বিষয়ে দেলদুয়ার থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম সাইদুল হক ভূঁইয়া জানান, ঘটনাটি তার জানা নেই এবং থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno