আজ- ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ রবিবার  ভোর ৫:৪৪

সবার প্রিয় আনোয়ারা কেমন আছেন?

 

দৃষ্টি বিনোদন:

ষাটের দশকে নৃত্যশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে তার অভিষেক। বাংলা ও উর্দু সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। পেয়েছেন তুমুল দর্শক জনপ্রিয়তা। খ্যাতি লাভ করেছেন চলচ্চিত্রের মা চরিত্রে অভিনয় করে।

পর্দায় নায়ক বা নায়িকার মা হয়ে হাজির হয়েছেন এ অভিনেত্রী। বাস্তবে একজন মা তার সন্তানদের কিভাবে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন সেটাই অভিনয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। অভিনয় জীবনে মানুষকে যেমন হাসিয়েছেন তেমনিভাবে কাঁদিয়েছেনও। দীর্ঘদিন ধরেই রূপালি পর্দায় দেখা যায় না এই গুণী অভিনেত্রীকে। এমন অবস্থায় বর্ষিয়ান অভিনয় শিল্পীরা কে কোথায় আছেন আর কেমনই বা আছেন, কে কার খোঁজ রাখে।


প্রসঙ্গটি এলো আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী আনোয়ারার কথা বলতে গিয়ে। ‘গোলাপি এখন ট্রেনে’, ‘দেবদাস’, ‘শুভদা’, ‘সুজন সখি’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি। পরে পর্দায় ‘মা’ চরিত্রে অভিনয় করে জয় করেছেন অসংখ্য দর্শকের হৃদয়। অভিনেত্রী আনোয়ার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ছিল মূলত ‘আলেয়া’ চরিত্রে করা ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ সিনেমাটি।


পর্দার আলোচিত এ অভিনেত্রী এখন আর দাঁড়ান না লাইট-ক্যামেরার সামনে। এখন ভালো গল্প ও চরিত্র পান না বলেই কাজ করা হয় না বলে জানান তিনি। আনোয়ারা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘গল্প, আমার উপযোগী চরিত্র না পেলে আমি অভিনয় করব না। যতই বয়স বাড়ু–ক সেই বয়স অনুযায়ীও গল্প আছে কিন্তু আমাদের এখানে এসব হয় না।’


বললেন তিনি, এখন তার বাসাতেই সময় কাটে। অভিনয় জীবনের শুরুতে দু’একটি সিনেমায় নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করলেও পরে আর কোন সিনেমায় নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়নি তাকে। তার কারণ হিসেবে এ অভিনেত্রী বলেন, ‘নায়িকা চরিত্রে আলাদা কিছু করার নেই। যারা চরিত্রাভিনেত্রী তাদের অনেক কিছু করার থাকে। সে হিসেবে আমি ভাগ্যবতী। আসলে আমি বিভিন্ন রকমের চরিত্র করেছি। দর্শকরা আমাকে ভালোবাসে, আমি জানি। দর্শকরা আমাকে আনু দি, আনু আপা বলেন। কিন্তু ভক্তরা আমাকে মা বলেন।’


গুণী এই অভিনেত্রীর খোঁজখবর নেওয়ার জন্য মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় তার মেয়ে নায়িকা রোমানা ইসলাম মুক্তির সঙ্গে। অভিনেত্রীর বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তার মেয়ে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ আগের চাইতে অনেক ভালো আছেন। মাঝখানে অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তখন আমাদের কাউকেই চিনতে পারতেন না। এখন মোটামুটি অনেকটাই সুস্থ আছেন। আমাদের চিনতে পারেন। নিজের হাতে খেতে পারেন। নিজে নিজে চলাফেরাও করতে পারেন। সব মিলিয়ে আম্মু মোটামুটি ভালো আছেন।

অভিনেত্রীর দীর্ঘদিনের চিকিৎসা খরচ কিভাবে চলছে জানতে চাইলে মুক্তি বলেন, আমার আম্মুর খরচ আমরাই বহন করে যাচ্ছি। আমাদের যতটুকু সামর্থ্য আছে সেই সামর্থ্য অনুযায়ীই আমরা নিজেরাই খরচ চালিয়ে যাচ্ছি। যত দিন সম্ভব ততদিন আমার মায়ের খরচ আমরাই চালিয়ে যাব। তবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছিলেন আমি ওনার পাশে আছি এবং থাকব। কোনো রকমের সাহায্য-সহযোগিতা লাগলে সেটা আমি শোনা মাত্রই ব্যবস্থা নেব।

কিন্তু আমাদের সেরকম প্রয়োজনও হয়নি এবং এ নিয়ে কোনো তদবিরও করিনি। শুধু শুধু কেন মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে এটা নেব। মিথ্যা অজুহাতে এসব নেওয়াটাও নিজের কাছে খারাপ লাগে। তাই আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোনো আবেদন করিনি। কারণ আমাদের তো ওরকম কিছুর প্রয়োজন হচ্ছে না। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা মায়ের চিকিৎসার খরচ চালিয়ে যাচ্ছি।


অভিনয় জীবনের দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা তার খোঁজখবর নেন কিনা জানতে চাওয়া হলে মেয়ে রোমানা ইসলাম মুক্তি বলেন, ‘প্রথম প্রথম অনেকেই খোঁজ নিয়েছেন। আসলে আমার আম্মুর সঙ্গে তো সবারই ভালো সম্পর্ক ছিল। তাই সবাই ফোন করে খোঁজখবর নিয়েছেন। শিল্পী সমিতি থেকে শুরু করে অনেক সিনিয়র শিল্পীরাও খবর নিয়েছেন এবং নিচ্ছেনও। আম্মুর খবর শুধু শিল্পীরাই নন তার অনেক ভক্তরাও খবর নিয়ে থাকেন। আমি সবার কাছে আম্মুর জন্য দোয়া চাই। সবাই আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন যাতে উনি সব সময় ভালো থাকেন।’


প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই প্রখ্যাত এই অভিনেত্রীর স্বামী মহিতুল ইসলাম ব্রেন-স্ট্রোক করেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিকিৎসার জন্য ৩০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বামীকে বাঁচাতে পারেননি এই অভিনেত্রী। ১৯৭২ সালে মুহিতুল ইসলাম মুহিতের সঙ্গে আনোয়ারার বিয়ে হয়। মুক্তি তাদের একমাত্র সন্তান।


অভিনেত্রী আনোয়ারার উল্লেখযোগ্য কিছু ছবি- ‘বলবো কথা বাসর ঘরে’, ‘কাজের মানুষ’, ‘মায়ের হাতে বেহেস্তের চাবি’, ‘আমার পৃথিবী তুমি’, ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী’, ‘মাই নেম ইজ সিমি’, ‘চিনি বিবি’, ‘অপরাধী বাদশাহ’, ‘দাদীমা’, ‘জবাব দে’, ‘প্রেম পিয়াসী’, ‘সমাধি’, ‘মায়ের স্বপ্ন’, ‘অন্তরে অন্তরে’ ইত্যাদি।


বাংলা চলচ্চিত্রের বর্ষিয়ান এ অভিনেত্রী একটা সময় নিয়মিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করতেন। তবে এখন আর আগের মতো অভিনয়ে নেই তিনি। সর্বশেষ এই অভিনেত্রী ‘আমার মা’ শিরোনামের একটি ছবিতে অভিনয় করেন। গুণী এই অভিনেত্রী চলচ্চিত্রের দাদি মা হয়েও অভিনয় করেছেন। অভিনেতা ডিপজলের দাদি মা সিনেমাতে দাদি মা হয়ে হাজির হয়েছিলেন অভিনেত্রী আনোয়ারা। মজার একটি বিষয় হলো প্রবীর মিত্র-রাজ্জাকেরও মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন এ অভিনেত্রী।


চলচ্চিত্র জগতে কিভাবে আসলেন তা নিয়ে জানতে চাইলে এ অভিনেত্রী বলেন ‘চলচ্চিত্রে অভিনয় করব এ ধরনের ভাবনা কখনো ছিল না। আমি অভিনয় থেকে নাচকে বেশি ভালোবাসতাম। ছোটবেলায় আমাকে যখন স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয় তখন স্কুল ফাঁকি দিতে লাগলাম। কারণ তিনি দেখলেন নাচের প্রতি আমার অন্যরকম ভালোবাসা আছে। তখন বাবা আমাকে হারমনিয়াম, তবলা কিনে দিলেন।

একজন শিল্পীর কিন্তু অভিনয়ের তৃষ্ণা কখনো মিটে না। সেটা জাত শিল্পী হলে থেকেই যায়’। এভাবেই তার অভিনয়ের শুরুর দিনগুলোর কথা মনে করে বলছিলেন তিনি।


গুণী এ অভিনেত্রী মনে করেন, চেষ্টা করলে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। দর্শকদের জন্য ভাবতে হবে। তাহলেই ফিরে আসবে চলচ্চিত্রে সুদিন।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno