আজ- ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  রাত ১০:৩৩

সেতুমন্ত্রীর হাতে টাঙ্গাইলের এমপি লাঞ্ছিতের ঘটনায় তোলপাড় ॥ এমপির না

 

‌দৃষ্টি নিউজ:

dristy-d-49
আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের হাতে টাঙ্গাইল-৫(সদর) আসনের এমপি আলহাজ্ব মো. ছানোয়ার হোসেন লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশের খবরে জেলায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ‘ভাইরাল’ হয়ে গেছে। এমপি আলহাজ্ব মো. ছানোয়ার হোসেন লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনা অস্বীকার করেও স্থানীয় পর্যায়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
ওই ঘটনা রোববার(১৯ ফেব্রুয়ারি) পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানার পর শহরের অলি-গলির চা স্টল থেকে শুরু করে অফিস-আদালত সহ সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এদিকে, ঘটনার ভিকটিম টাঙ্গাইল-৫(সদর) আসনের এমপি আলহাজ্ব মো. ছানোয়ার হোসেন লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা অস্বীকার করে বলেছেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের সাধারণ সম্পাদক। তিনি আমার বড় ভাই। তিনি শাসন করতে পারেন এবং সে আমাদের আদরও করবেন। তার বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। তিনি যাওয়ার আগে মাথায় হাত বুলিয়ে আমাকে আদর করেছেন।
রোববার দিনভর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নানা বয়সী লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, সেতুমন্ত্রী এমপি ছানোয়ার হোসেনের গায়ে হাত তুলে অন্যায় করেছেন, টাঙ্গাইলের ৩৬ লাখ মানুষকে অপমান করেছেন। তারা সেতুমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন। জেলা প্রশাসনের পরিত্যক্ত জায়গার চা-দোকানী আ. আলীম বলেন, এ ঘটনা শুনতে পেরে তার স্ত্রী ফোন দিয়ে পার্টি অফিসে (আওয়ামীলীগ অফিস) গিয়ে পদত্যাগ করে বাসায় ফিরতে বলেছেন। এটা পুরো টাঙ্গাইলবাসীর জন্য লজ্জার।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের নার্স শারমিন, মমিন, রোগীর সাথে আসা গোপালপুরের শাজাহান, কালিহাতীর আবু সাইদ, দেলদুয়ারের মফিজুল, সদর উপজেলার সাইফুল সহ অনেকেই জানান, তারা কোন এমপি-মন্ত্রী বুঝেন না, জনসমক্ষে কারো গায়ে হাত তোলা অন্যায়। সেতুমন্ত্রী অন্যায় করেছেন। একজন এমপির শরীরে হাত তোলা টাঙ্গাইলবাসীর জন্য কলঙ্কের। তারা ওবায়দুল কাদেরের শাস্তি দাবি করেন।

টাঙ্গাইলের এমপিকে লাঞ্ছনার ঘটনায় এভাবে মুখ ঢেকে ফেসবুকে প্রতিবাদ জানান কেউ কেউ

টাঙ্গাইলের এমপিকে লাঞ্ছনার ঘটনায় এভাবে মুখ ঢেকে ফেসবুকে প্রতিবাদ জানান কেউ কেউ

টাঙ্গাইলের কয়েকজন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা বলেন, তারা ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। একজন এমপিকে লাঞ্ছিত করে সেতুমন্ত্রী ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছেন।
জেলা শহরের আওয়ামী বিরোধী রাজনৈতিক বোদ্ধারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সব সময় টাঙ্গাইলের তথাকথিত ‘খান পরিবার’কে সমর্থন দিয়েছেন। তাঁর আশ্রয়-প্রশ্রয়েই এক সময় খান পরিবার বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বীরমুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় খান পরিবারের প্রভাবশালী সদস্যরা আত্মগোপণে চলে যাওয়ার পরও তাঁর(সেতুমন্ত্রীর) সমর্থন অক্ষুন্ন রয়েছে। জেলার আওয়ামী রাজনীতির পট পরিবর্তনে বর্তমান নেতৃত্বদের সাথে এমপি ছানোয়ার হোসেনকে দেখে তিনি ক্ষুব্ধ হন। সুযোগ বুঝে তিনি এমপি ছানোয়ারের উপর চড়াও হন। এটা কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা নয়, পূর্বপরিকল্পিত।
টাঙ্গাইল জেলা অ্যাডভোকেট বার সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাবেক সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। টাঙ্গাইল সদরের এমপি ছানোয়ার হোসেন একজন সরল মানুষ বিধায় সেতুমন্ত্রী টাঙ্গাইলবাসীর গালে থাপ্পর মারার ধৃৃষ্টতা দেখাতে পেরেছেন।
টাঙ্গাইল জেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক ফকির শাহ্ আলম বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রীর হাতে নির্বাচিত এমপি লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ও ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এ ঘটনার পেছনে যে রহস্যই থাকুক না কেন, প্রতিটি দলের নেতাকর্মীর জন্য এটি একটি অশনিসঙ্কেত। এ ঘটনায় শুধু দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণই ঘটেনি, এতে দলের নেতাকর্মী ও নির্বাচিত এলাকাবাসীর অবমূল্যায়ন হয়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।
জেলা বিএনএফ’র আহ্বায়ক আতাউর রহমান খান বলেন, টাঙ্গাইলে বর্তমানে মেরুদন্ডহীন নেতৃত্ব চলছে। বর্তমান এমপি এক প্রকার সিলেক্টেড এমপি, জনগনের কোন সমর্থন না থাকায় তিনি সত্য উচ্চারণে ভীত। ওবায়দুল কাদের যে ঘটনা ঘটিয়েছে তা টাঙ্গাইলবাসীর জন্য লজ্জার- এজন্য তাঁকে(ওবায়দুল কাদের) প্রকাশ্যে টাঙ্গাইলবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের জানান, এমপি সোহেল হাজারি উপস্থিত না থাকায় নেতা ুব্ধতা প্রকাশ করেন। ভুল আমাদেরই ছিল বলে আমি মনে করি। তিনি আমাদের রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আমাদের শাসন করেছেন। শাসন করার এখতিয়ার তার আছে বিধায় তিনি শাসন করেছেন।
টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের নব-নির্বাচিত এমপি হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ওবায়দুল কাদের ভাই আমাদের অভিভাবক। তিনি আমাদের শাসন করেন আবার আদরও করেন। এটি ছিল একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা।
কৃষক শ্রমিক জনতালীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম বলেন, কোন সভ্য দেশে একজন এমপির শরীরে হাত তোলা হয়না। যদি সেতুমন্ত্রী ওই ঘটনা ঘটিয়ে থাকে আমি তার তীব্র নিন্দা জানাই।
টাঙ্গাইলের এমপি মো. ছানোয়ার হোসেন আরো জানান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হাতে তার লাঞ্ছিত হওয়ার খবর সঠিক নয়। তিনি বলেন, মন্ত্রী নেতা-কর্মীদের ভিড় আর স্লোগানে বিরক্ত প্রকাশ করে একটু রাগারাগি করেছেন। পরে তিনি অঅমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে আদরও করেছেন। তিনি জানান, এ নিয়ে যারা মিথ্যে সংবাদ প্রকাশ করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা।
উল্লেখ্য, নাটোর থেকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে যমুনা রিসোর্টে শনিবার(১৮ ফেব্রুয়ারি) যাত্রাবিরতি করেন। এ সময় তার রাতের খাবারের আয়োজন করেন, টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের নবনির্বাচিত এমপি হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুক, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের, টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনের সংসদ সদস্য অনুপম শাজাহান জয়, যুগ্ম-সম্পাদক খন্দকার আশরাফুজ্জামান স্মৃতি, নাহার আহমদ, কালিহাতী উপজেলা চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম তালুকদার, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন মানিক, টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক খান আহম্মেদ শুভ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী সেখানে পৌঁছানোর পর দলীয় কর্মীরা জয় বাংলা স্লোগান দিলে তিনি স্লোগান থামাতে বলেন এবং এ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন। হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী এমপি বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত করার কারণে যথাসময়ে উপস্থিত না থাকায় ওবায়দুল কাদের নেতা-কর্মীদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে রাতের খাবার না খেয়েই চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এসময় টাঙ্গাইল-৫(সদর) আসনের এমপি আলহাজ্ব মো. ছানোয়ার হোসেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে খাওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। তিনি সেতুমন্ত্রীকে বলেন, হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী রাস্তায় আছেন। তিনি কিছুণের মধ্যে চলে আসবেন।
এমপি ছানোয়ার একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ওবায়দুল কাদের হঠাৎ প্তি হয়ে তাকে চড়-থাপ্পড় মেরে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন ও অন্যান্য নেতাকর্মীদেরও গালমন্দ করেন। তিনি এমপি ছানোয়ার হোসেনকে তিনটি চড় ও ঘুষি মারেন। সেতুমন্ত্রীর এহেন আচরণে নেতাকর্মীরা হতভম্ভ হয়ে পড়েন। পরে তিনি প্তি হয়ে রেস্ট হাউস থেকে বের হয়ে যান। তিনি হেঁটেই রিসোর্টের গেট পর্যন্ত আসেন। সেখানে দলীয় নেতাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে জেলায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno